স্বদেশ ডেস্ক:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েন বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যান তিনি। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা আহ্বায়ক পদ কেড়ে নেয় বিএনপি। তৈমূরকে বহিষ্কার করা হয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও কেন্দ্রীয় পদ থেকেও। সব মিলিয়ে ফল ঘোষণার পর থেকে দলের অনেক নেতাকর্মীই বলছেন, ‘তৈমূর একূল-ওকূল দুই কূলই হারাল।’
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের অনেকেই মনে করেন, তৈমূরের অনুসারীরা বিএনপির রাজনীতিতেও বেকায়দায় পড়তে পারেন। কতদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে আছেন, এমন প্রশ্নে তৈমূর আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতিতে বহুদিন থেকে আছি। হিসাব-কিতাব করে দেখতে হবে, তাও ৩০ বছর হবে।’
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হওয়ার পরও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার দরকার কি? রাজনীতি করতে পদ-পদবি লাগে না। দল ইচ্ছা করলে রাখতে পারে, আবার বিদায় করেও দিতে পারে।’
আপনি বিএনপির রাজনীতি করতে চান কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আগে দেখি দল কী করে, তারপরে বলব।’
২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হিসেবে হেরে যান অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। তিনি এবারও নির্বাচন করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।
আমাদের সময়কে সাখাওয়াত বলেন, ‘শুধু আমিই নই; আমার মতো অনেকেই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত ছিল। বেশিরভাগ নেতাকর্মী দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচনে যায়নি। নানা সংকটেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, প্রচারে অংশ নিয়েছেন, তাদের ব্যাপারে নেতাকর্মীদের বক্তব্য স্পষ্ট। তা হলো, দল পুনর্গঠনে যেন দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের রাখা না হয়। এটা হলে তৃণমূলে একটা বড় বার্তা যাবে। সেই বার্তা হলো, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে দল তাকে ছাড় দেয় না। বরং যারা সিদ্ধান্ত মেনে চলে, দল তাদের নিয়ে সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করে।’
এ অবস্থায় দলের নীতিনির্ধারণী ও গুরুত্বপূর্ণ চার নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, দলীয় পদ-পদবিতে তৈমূরের ফেরা বেশ কঠিন হবে। তার কর্মকা-ের ওপর বিশেষভাবে নজর রাখা হবে।
দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, মূলত তৈমূর কোন শক্তির ইঙ্গিতে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করল, এখানে দলের কোনো নেতার কোনো ইন্ধন ছিল কিনা, বিস্তারিত সব বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে।
এখনই তৈমূরকে দলের পদ-পদবিতে ফেরানো হবে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, ‘যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছে, তাদের ব্যাপারে দল এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখনই ফেরানো হবে কিনা সেটাও দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এদিকে নাসিক নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তৈমূরের ব্যাপারে নেওয়া দলের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক। নেতার ওপর দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীর আস্থা আরও বেড়ে গেল।’ ছাত্রদলের সহসভাপতি মামুন খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘তৈমূর আলম সাহেবদের কাছ থেকে আমি একটাই শিক্ষা নিতে চাই… রাজনৈতিক জীবনে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত মেনে রাজনীতি করতে হবে।’
দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, তৈমূর আলমের সঙ্গে তার মেয়ে ব্যারিস্টার মারিয়াম খন্দকারের বিএনপির রাজনীতিও হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে মারিয়াম দলের নেতাকর্মীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
তবে প্রকাশ্যে তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে কথা না বললেও দলের অনেকেই মনে করেন, ব্যক্তিগতভাবেও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপরীতে তৈমূর আলম খন্দকার তুলনামূলক প্রার্থী হিসেবে দুর্বল ছিল। আবার তৈমূরের নামের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি শামীম ওসমানের প্রার্থীর তকমা লাগায় দলীয় অনেক সমর্থকই তাকে ভোট দেয়নি। এ ছাড়া তৈমূর আলমের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অনেক নেতাকর্মীর বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান তার শিবিরে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। এই অবস্থায়ও দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করলে তৈমূরের পক্ষে ফল আসতে পারত। তবে এ অবস্থায় তৈমূর যদি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদন জানান, তাহলেই তিনি কেবল দলীয় পদ-পদবিতে ফিরতে পারেন। এ ছাড়া বিকল্প কোনো সম্ভাবনা নেই।
নাসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না- এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। অতএব নাসিক নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’
এদিকে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের জামিনের আবেদন নিয়ে গতকাল আদালতে যান তৈমূর। নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ক-অঞ্চল) নুরুন্নাহারের আদালতে জামিন শুনানি করেন। তৈমূর বলেন, নির্বাচনের আগ থেকে পুলিশ তার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করে আসছে। ভোটের ২ দিন আগে ১৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভোটের আগের দিন রাতে আরও ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের হেফাজতে ইসলামের গাড়ি পোড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর বাইরেও তৈমূরের বড় অভিযোগ ছিল, বেশ কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ ও ধীরগতির ছিল। অনেক লোক ভোট দিতে পারেনি। ইভিএমের কারচুপির জন্য আমাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে।